■ হার্ডডিস্ক (Hard Disk-HD)
১৯৮০ সালের দিকে হার্ডডিস্ক প্রচলন শুরু হয়। হার্ডডিস্ক হলো পাতলা গোলাকার ধাতব পাতের সমন্বয়ে গঠিত সহায়ক স্মৃতি (Decondary Memory)। কম্পিউটারের তথ্যাবলী সংরক্ষণের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য ষ্টোরেজ ডিভাইস। এতে সংরক্ষিত তথ্যসমূহ সহজে নষ্ট হয় না বলে প্রয়োজনীয় সকল অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করা হয়।
হার্ডডিস্কের সংগঠন : হার্ডডিস্কে পাতলা গোলাকার ধাতব পাত থাকে, যার উভয়পৃষ্টে চৌম্বকীয় পদার্থ ফেরিক অক্সাইডের প্রলেপ থাকে। এজন্য একে ম্যাগনেটিক ডিস্কও বলা হয়। ডিস্কের গোলাকার পাতগুলো দেখতে গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো। এসব পাতগুলো একটির উপর আরেকটি স্তুপাকারে বসানো থাকে, যাদের মাঝে আধা ইঞ্চির মতো ফাঁকা জায়গা থাকে। পাতগুলোর মাঝে একটি দন্ড থাকে। এ দন্ডের সাহায্যেই পাতগুলো একটির উপরে আরেকটি বসানো থাকে। এই দন্ডের সাহায্যেই কাজের সময় পাতগুলো প্রতি মিনিটে ৭২০০ বারের বেশি আবর্তিত হয়।
হার্ডডিস্কের ধারণ ক্ষমতা: বর্তমানে গিগাবাইট থেকে কয়েক টেরাবাইট ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হার্ডডিস্ক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে এই ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি ধাতব পাতের উভয় পৃষ্ঠে তথ্য সংরক্ষিত থাকতে পারে। একটির পর একটি করে লম্বালম্বিভাবে স্থাপিত একটি দন্ডকে কেন্দ্র করে এরূপ অনেকগুলো ডিস্কের সমষ্টিকে বলা হয় ডিস্ক পেক। তবে সবচেয়ে উপরের ডিস্কের উপরের পৃষ্ঠে এবং সবচেয়ে নিচের ডিস্কের নিচের পৃষ্ঠে কোনো তথ্য সংরক্ষিত থাকে না। এভাবে ২০টি ডিস্কের সাহায্যে গঠিত ডিস্ক পেক— এ ৩৮টি পৃষ্ঠে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। প্রতিটি পৃষ্ঠের জন্যই থাকে একটি করে
Read/Write হেডার।
সুতরাং একটি ডিস্কের মোট ধারণ ক্ষমতা = PxTxSxB বাইট।
এখানে,
P= ব্যবহৃত মোট পৃষ্ঠের সংখ্যা
T = প্রতি পৃষ্ঠে ট্র্যাকের সংখ্যা
S = প্রতি ট্র্যাকে সেক্টরের সংখ্যা
B = প্রতি সেক্টরে বাইটের সংখ্যা
হার্ডডিস্কের সুবিধাসমূহ
১. এর ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি।
২. এটি মজবুত বা টেকসই।
৩. এটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে তাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৪. এটি একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন তথ্য সংরক্ষণ মাধ্যম।
হার্ডডিস্কের অসুবিধাসমূহ
১. এটি অত্যন্ত দামী ।
২. এটি একবার নষ্ট হলে মেরামত করা যায় না।
৩. এটি ফ্লপিডিস্কের মতো যখন তখন ড্রাইভ হতে খোলা যায় না।
৪. নতুন প্রশিক্ষণার্থী না বুঝে Format এবং Delete কমান্ড দিয়ে হার্ডডিস্কের ফাইল সহজে মুছে দিতে পারে।
এসএসডি (SSD- Solid State Drive)
এসএসডি পূর্ণরূপ হচ্ছে সলিড স্টেট ড্রাইভ। সাধারণত পেনড্রাইভ বা মেমোরি কার্ডে যে মেকানিজম ব্যবহার করা হয় SSD এর ক্ষেত্রেও সেই একই মেকানিজম ব্যবহার করা হয়। এটিতে কিছু ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। SSD তে কোনো মুভিং (চক্রাকার) অংশ না থাকায় এটি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনকি শব্দ করে না এবং গরম হয় না। এসএসডি যুক্ত একটি কম্পিউটার বুট হতে সময় লাগে ১০ – ১৩ সেকেন্ড। কপি বা রাইট স্পীড ২০০ – ৫০০ এমবিপিএস পর্যন্ত হয়। হার্ডডিস্ক এর তুলনায় ৩০% দ্রুত ফাইল অপেন হয়।
ফ্ল্যাশ মেমোরি (Flash Memory )
ফ্ল্যাশ মেমোরির কার্যপদ্ধতি অনেকটা EPROM এর মতো। কম্পিউটারের অভ্যন্তরে থাকা অবস্থাতেই পুনরায় প্রোগ্রাম করা সম্ভব। ফ্লপি ডিস্ক বা হার্ডডিস্কের বিকল্প হিসেবে এই ধরনের মেমোরি ব্যবহার করা হয়। যে সমস্ত পরিস্থিতিতে ফ্লপি ডিস্ক বা হার্ডডিস্কের কার্যপ্রণালীর নির্ভরযোগ্যতা হারানোর সম্ভাবনা আছে কিংবা বিদ্যুতের বিফলতা বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে সে সব কাজের জন্য এই ফ্ল্যাশ মেমোরি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইদানীংকালের অনেক পোর্টেবল কম্পিউটারে ফ্ল্যাশ মেমোরি কার্ড থাকে ।
অপটিক্যাল মেমোরি (Optical Memory)
যে সমস্ত ডিস্কে অপটিক্যাল স্টোরেজ প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা সংরক্ষণ করা হয় তাকে অপটিক্যাল মেমোরি বলে। যেমন— CD-ROM Disk বা CD Disk, DVD ইত্যাদি।
সিডি-রম (CD-ROM-Compact Disk Read Only Memory) : বর্তমান সময়ে কম্পিউটারে ডেটা সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত মেমোরি হচ্ছে সিডি-রম (CD-ROM)। সাধারণত সিডির ধারণক্ষমতা ৬৫০ – ৭৫০ মেগাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এতে সাধারণত এক সাইডে তথ্য সংরক্ষিত থাকে। দামে সস্তা হওয়ার কারণে সিডিতে অডিও/ভিডিও, সফটওয়্যার, বড় ধরনের ডেটা ইত্যাদি সংরক্ষণে খুবই জনপ্রিয়। সিডিতে সংরক্ষিত তথ্য বহুদিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে।
সিডি পলিকার্বনেট প্লাস্টিকের তৈরি অ্যালুমিনিয়ামের প্রলেপযুক্ত। অপটিক্যাল ডিস্কে বা সিডিতে লেজার রশ্মির সাহায্যে লিখন ও পঠনের কার্য সম্পন্ন করা হয়। ঘূর্ণায়মান অপটিক্যাল ডিস্কে লেজার রশ্মির সাহায্যে লেখার সময় অ্যালুমিনিয়ামের পাতের অতি সূক্ষ্ণ গর্ত (Pit) সৃষ্টি করা হয়। এ ধরনের গর্তের গভীরতা ০.১২ মাইক্রোমিটার এবং প্রস্থ ০.৬ মাইক্রোমিটার। পিট ও ল্যান্ড বাইনারি ডিজিট '০' এবং '১' এর প্রতিনিধিত্ব করে। গর্তের সারি দিয়ে তৈরি হয় স্পাইরাল ট্র্যাক। প্রতিটি স্পাইরাল ট্র্যাকের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো ১.৬ মাইক্রোমিটার। প্রতি ইঞ্চিতে ট্র্যাকের সংখ্যা প্রায় ১৬,০০০।
A) পলিকার্বনিক ডিস্ক
B) প্রতিফলিত লেয়ার
C) লেকুয়ার লেয়ার (Lecquer)
D) লেবেল প্রিন্ট
E) লেজার বিম
প্রথম তৈরিকৃত সিডি ড্রাইভের ডেটা পড়ার হার ছিল ১৫০ কিলোবাইট/সেকেন্ড। এ ধরনের ড্রাইভের গতি IX নামে পরিচিত। বর্তমানে 52X গতির সিডি ড্রাইভ বেশি ব্যবহৃত হয়, যার ডেটা পড়ার হার ৭৮০০ কিলোবাইট/সেকেন্ড ।
ডিভিডি (DVD): DVD এর পূর্ণরূপ Digital Versatile Disk বা Digital Video Disk | সাম্প্রতিককালে সিডি-রম প্রযুক্তিকে স্থলাভিষিক্ত জন্য ডিভিডি নামক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। ডিভিডি সিডি রমের চাইতে বহুগুণ বেশি তথ্য ধারণ করতে পারে। এটি সিডি রমের মতোই অডিও-ভিডিও ধারণ করতেও সক্ষম। ডিভিডি ড্রাইভ প্রচলিত সিডি রমও পাঠ করতে পারে। সিডির ন্যায় ডিভিডি রমেরও ব্যাস ১২০ মি. মি. এবং পুরুত্ব ১.২ মি.মি.। তবে সিডিতে এক পার্শ্বে ডেটা রাখা যায় কিন্তু ডিভিডিতে দুপার্শ্বেই ডেটা রাখা যায়। সবচেয়ে বড় বৈসাদৃশ্য হলো তথ্য ধারণ ক্ষমতায়। সাধারণ সিডির তথ্য ধারণ ক্ষমতা ৬৫০ মেগাবাইট অথচ প্রথম দিককার ডিভিডির ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪.৭ গিগাবাইট। সিডি রমের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অদৃশ্য ইনফ্রারেড রশ্মি যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭৮০ ন্যানোমিটার। কিন্তু ডিভিডি-র ক্ষেত্রে লাল রঙের লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হয় যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৬৩৫ ন্যানোমিটার। ডিভিডিতে দুটি স্তরে ডেটা সংরক্ষণ করার জন্য বাইরের দিকে থাকে অর্ধস্বচ্ছ সোনালী স্তর আর ভিতরের স্তরটি হয় সিলভার স্তর। এই স্তরটি পড়ার জন্য অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার ব্যবহৃত হয়। ডিভিডিতে ০.৬ মি.মি. পুরুত্বের দুটি প্লেটার পাশাপাশি গ্লু দিয়ে লাগানো থাকে।